রাজশাহী জেলার মোহনপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা । আমাদের এই উপজেলার উপর দিয়ে রাজশাহী – নওগাঁ মহাসড়ক । যা দুই জেলাকে যুক্ত করেছে। এই উপজেলার অন্য পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হয়। এই মহাসড়কের উপরে দিন দিন চাপ বেড়ে চলেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে যানবাহনের চাপ । প্রয়োজনের তাগিদে যেতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ, বাজার, হাসপাতাল সহ সরকারি বেসরকারি দপ্তরে । যানবাহনের কারণে পথচারীদের চলাচল দিনকে দিন হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু, শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত সড়ক পার হচ্ছেন, যেখানে নিরাপদ পথচলার কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা নেই। বেপরোয়া গাড়ির গতিতে রাস্তাতে পার হতে সকল বয়সী মানুষের সমস্যা হয়।
নিরাপদ পথচারী চলাচল নিশ্চিত করার জন্য ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস একটি সময়োপযোগী ও কার্যকর সমাধান হতে পারে। আন্ডারপাস বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
কেন আমার ভাবনাঃ
আজ ৬ মে ২০২৫ ইং তারিখে আমার মেয়েকে আমি স্কুলে সকালে রেখে আসলাম। আবার ১২ টার দিকে বাইকে করে নিয়ে আসলাম। বাসায় নামিয়ে আমার ভাগ্নিকে নিয়ে আবার বাইকে করে স্কুলে রাখতে যাচ্ছি। গাড়ি আস্তে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গেটে সামনে যেতে একটা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র দৌড় দেয়। ডানে বামে দেখে পার হয়নি বাচ্চাটা। হুট করে দৌড় দেয়।
রাজশাহী দিক থেকে আসা কার এর সাইড ঘেষে চলে আসে। গাড়ির ড্রাইভার ব্রেক করে। কারের সামনে দিয়ে আমার গাড়ির সামনে চলে আসে। আমি ধীরে ছিলাম ব্রেক ধরে দাঁড়িয়ে যায়। ভাগ্নি আমার পিছনেই বসা। একটুর জন্য বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলো সেই বাচ্চাটি।
আজ থেকে আমার চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। আমার সন্তানও তো স্কুলে যায়।
এর আগেও দেখেছি অনেকে রাস্তা পার করে দেয়। আমিও রাস্তা পার করে দিয়েছি। মাঝে মাঝে চিন্তা করি আসলে আন্ডারপাস হলে এইটা সমাধান হবে ।
দুর্ঘটনাপ্রবণ মোড় ও পারাপারের সমস্যা যেখানে ওভারব্রিজ/আন্ডারপাস প্রয়োজন
সইপাড়া মোড়
সইপাড়া মোড় এলাকাটি একটি ব্যস্ততম জনপদ। এখানে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা পার হতে গিয়ে শিশু, নারীসহ সাধারণ পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। একটি আন্ডারপাস নির্মাণ হলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
ভাতুড়িয়া মোড়
এখানে একটি স্কুল থাকায় প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী রাস্তা পার হয়। উপযুক্ত পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছে। আন্ডারপাস বা ছোট ওভারব্রিজ এখানকার প্রয়োজনীয়তা।
মোহনপুর থানার মোড়
এই মোড়টি একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে যানবাহনের চাপ বেশি। থানায় আগত লোকজন ও আশেপাশের দোকানপাটের কারণে এখানে একটি নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
উপজেলা গেট
উপজেলা ভবনের সামনে প্রতিদিন বহু মানুষ যাতায়াত করেন। এখানে সরকারি কার্যক্রম, জনসমাগম ও যান চলাচল বেশি হওয়ায় পথচারীরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়ে যান। একটি আন্ডারপাস এখানে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
সরকারি স্কুল গেট
সরকারি স্কুল গেট এলাকা প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর। ব্যস্ত সড়ক হওয়ায় শিশুদের নিরাপদ চলাচলের জন্য একটি পথচারী আন্ডারপাস অপরিহার্য।
খাড়ইল স্কুল
এই এলাকায় স্কুল থাকার ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন রাস্তা পার হতে হয়। আন্ডারপাস থাকলে দুর্ঘটনার ভয় কমে যাবে এবং অভিভাবকরাও নিশ্চিন্ত থাকবেন।
মৌগাছি বাজার ও স্কুল মোড়
বাজার ও স্কুলের সংমিশ্রণে এলাকাটি ব্যস্ত হয়ে উঠে সকাল ও বিকেলে। একদিকে বাজারের ভিড়, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের চলাচল — ফলে একটি সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পারাপার ব্যবস্থা, যেমন আন্ডারপাস, এখানে সময়ের দাবি।
ত্রিমোহনী মোড়
ত্রিমোহনী মোড় বহু সড়কের মিলনস্থল। এখান দিয়ে অনেক গাড়ি দ্রুতগতিতে চলাচল করে, যা পথচারীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস থাকলে ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
বড়াইল স্কুল মোড়
স্কুল সংলগ্ন এই মোড়ে নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা নেই। শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে সড়ক পার হয়, যা বড় ধরণের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কামারপাড়া মোড়
এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখানে প্রতিনিয়ত লোকজন চলাচল করে। একটি আন্ডারপাস বা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এখানে স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বিদিরপুর মোড়
এই এলাকায় স্থানীয় বাজার ও দোকানপাট রয়েছে। লোকজন রাস্তা পারাপারের সময় যানবাহনের মুখোমুখি হয়, যা বিপজ্জনক। আন্ডারপাস বা স্পিড ব্রেকারসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।
খয়রা মোড়
এখানেও একইভাবে মানুষ চলাচল করে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে। নিরাপদ পারাপারের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণ হলে এটি জনবান্ধব উদ্যোগ হবে।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। তাদের সঙ্গে থাকে পরিবার-পরিজন, অনেক সময় গর্ভবতী নারী, শিশু বা বয়স্ক রোগীও।
এই গেট সংলগ্ন সড়কটি ব্যস্ত এবং দ্রুতগতির যানবাহনের চলাচলে ভরা। ফলে রাস্তা পার হতে গিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আমার শেষ কথাঃ
মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিনই মানুষের চলাচলে মুখর থাকে। এসব স্থানে নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক সময় তা প্রাণঘাতীও হয়ে ওঠে।
আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজ নির্মাণ শুধু দুর্ঘটনা কমাবে না, বরং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা ও শৃঙ্খলাও গড়ে তুলবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে—অবিলম্বে এই ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা এবং নিরাপদ চলাচলের পথ সুগম করতে হবে।